চাইছি তোমার বন্ধুতা…

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ এক বালিকা এসে সামনে দাঁড়াল। বয়স তেরো কি চৌদ্দ। সঙ্গে ওর বয়সী একটি ছেলে। 

 

মোটামুটি পরিচিত। তবে তেমন কোনো ঘনিষ্টতা ছিল না আগে। মেয়েটি বলল, ‘তুমি কি আমার বন্ধু হবে?’ কিছুটা অবাক হলাম। এইটুকুন মেয়ে বলে কী? তবু বললাম, ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’ ও বলল, ‘তোমাকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা।’ হঠাৎ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। কী আর করা- হাতে ছিল ছোট্ট একটা বাতাবি লেবু। ওর হাতে দিয়ে বললাম, ‘ছোট্ট বন্ধুকে এই ছোট্ট লেবুর শুভেচ্ছা।’ ও তাতেই মহাখুশি। ওরা হাসতে হাসতে চলে গেল।

পরদিন ওর সঙ্গে থাকা ছেলেটার কাছে জানলাম, আমাকে নিয়ে ওদের মধ্যে বাজি হয়েছিল। ওদের ধারণা, আমি খুব গম্ভীর প্রকৃতির লোক। কেউ যদি আমাকে বন্ধু বানাতে পারে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। মেয়েটি বাজিতে জিতে গেল।

 

দু’দিন পর আবার দেখা। মেয়েটার হাতে একটা জবা ফুল। অনেক আশা নিয়ে ফুলটা চাইলাম। ও বলল, ‘এটা দেওয়া যাবে না। সবার হাতে ফুল মানায় না।’ আমি অপমান ও কষ্টে একবুক অভিমান নিয়ে চলে গেলাম। তারপর অনেক দিন কোন দেখা নেই।

 

হঠাৎ একদিন পাশে এসে দাঁড়িয়ে চমকে দিয়ে বলল, ‘বন্ধু কী খবর?’ আমি অভিমানে মুখ ফিরিয়ে বললাম, ‘আমার কোন বন্ধু নেই। তাছাড়া সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব মানায় না।’ মেয়েটা আমার কথায় কষ্ট পেল। ওর চাঁদের মতো মুখটা মুহূর্তেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল। কিছুক্ষণ কারো মুখে কোন কথা নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়েটা নিঃশব্দে চলে গেল। ওর পথপানে তাকিয়ে কেমন যেন বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। একটা অপরাধবোধ যেন গ্রাস করছে আমাকে। এ কেমন খেলায় মেতে উঠেছি আমরা।

 

পরদিন মেয়েটা এক বন্ধুর সঙ্গে তার বাসায় যাচ্ছিল। পথ আগলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বললাম, ‘গতকালের আচরণের জন্য আমি দুঃখিত!’ ওর চোখ ভরে উঠল জলে। কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল, ‘দুঃখিত, আমার কোনো বন্ধু নেই। আমি আপনাকে চিনি না।’ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।

 

হতে পারে সে বাজি ধরেছিল। আসলেই কি আমি গম্ভীর প্রকৃতির? আমি কি কারো বন্ধু হতে পারি না। তাছাড়া বন্ধুর সাথে অভিমান হতেই পারে। তাই বলে কি একটা সম্পর্ক অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে? তবে কি আমি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছি? কী এমন রহস্য লুকিয়েছিল ওই ফুলে? ফুল দিতে না পারুক, তাই বলে কি কাঁটা দিয়ে তার প্রতিদান দেবে? আর কত বড় হবে অনুতপ্তের পাহাড়? এর শেষ কোথায়?

 

এক বছর গত হতে চলল। আর কোনো কথা হয়নি সেই বালিকা বন্ধুর সাথে। হয়তো সে এখন বালিকা থেকে কিশোরী। একদিন কিশোরী থেকে যুবতী হবে। শেষে যুবতী থেকে বৃদ্ধা। তবুও তাকে বলবো, চাইছি তোমার বন্ধুতা…   সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আওয়ামী লীগের কার্যালয় এখন বাকরখানির দোকান

» বিশ্বকে চমকে দিতে প্রস্তুত ইরানের এআই অস্ত্রভাণ্ডার

» দেশে ‘কেমন একটা অস্থিরতা চলছে’ : ফখরুল

» এবার পালাবেন কোথায় কাদের? থাকতে পারবেন না ১৯৫ দেশে!

» একেকটা ঝটিকা মিছিলে ৫/৬ জন ৩ মিনিট মিছিল করে চলে যায়, এতে চিন্তার কি আছে ?: প্রেস সচিব

» কৃষ্ণচূড়া ছুঁয়ে বৈশাাখী মেঘ

» রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সম্মিলিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন : প্রধান উপদেষ্টা

» কুরবানির ঈদে কমবে লোডশেডিং থাকবে না যানজট: ফাওজুল কবির

» দাবি পূরণ করেই ছাত্ররা ক্লাসরুমে ফিরবে নওগাঁর পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা

» সুন্দরবনের উপকূলে খাদ্যের সন্ধানে জনপদে লোকালয়ে কালোমুখো হনুমান

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

চাইছি তোমার বন্ধুতা…

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ এক বালিকা এসে সামনে দাঁড়াল। বয়স তেরো কি চৌদ্দ। সঙ্গে ওর বয়সী একটি ছেলে। 

 

মোটামুটি পরিচিত। তবে তেমন কোনো ঘনিষ্টতা ছিল না আগে। মেয়েটি বলল, ‘তুমি কি আমার বন্ধু হবে?’ কিছুটা অবাক হলাম। এইটুকুন মেয়ে বলে কী? তবু বললাম, ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’ ও বলল, ‘তোমাকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা।’ হঠাৎ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। কী আর করা- হাতে ছিল ছোট্ট একটা বাতাবি লেবু। ওর হাতে দিয়ে বললাম, ‘ছোট্ট বন্ধুকে এই ছোট্ট লেবুর শুভেচ্ছা।’ ও তাতেই মহাখুশি। ওরা হাসতে হাসতে চলে গেল।

পরদিন ওর সঙ্গে থাকা ছেলেটার কাছে জানলাম, আমাকে নিয়ে ওদের মধ্যে বাজি হয়েছিল। ওদের ধারণা, আমি খুব গম্ভীর প্রকৃতির লোক। কেউ যদি আমাকে বন্ধু বানাতে পারে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। মেয়েটি বাজিতে জিতে গেল।

 

দু’দিন পর আবার দেখা। মেয়েটার হাতে একটা জবা ফুল। অনেক আশা নিয়ে ফুলটা চাইলাম। ও বলল, ‘এটা দেওয়া যাবে না। সবার হাতে ফুল মানায় না।’ আমি অপমান ও কষ্টে একবুক অভিমান নিয়ে চলে গেলাম। তারপর অনেক দিন কোন দেখা নেই।

 

হঠাৎ একদিন পাশে এসে দাঁড়িয়ে চমকে দিয়ে বলল, ‘বন্ধু কী খবর?’ আমি অভিমানে মুখ ফিরিয়ে বললাম, ‘আমার কোন বন্ধু নেই। তাছাড়া সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব মানায় না।’ মেয়েটা আমার কথায় কষ্ট পেল। ওর চাঁদের মতো মুখটা মুহূর্তেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল। কিছুক্ষণ কারো মুখে কোন কথা নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়েটা নিঃশব্দে চলে গেল। ওর পথপানে তাকিয়ে কেমন যেন বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। একটা অপরাধবোধ যেন গ্রাস করছে আমাকে। এ কেমন খেলায় মেতে উঠেছি আমরা।

 

পরদিন মেয়েটা এক বন্ধুর সঙ্গে তার বাসায় যাচ্ছিল। পথ আগলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বললাম, ‘গতকালের আচরণের জন্য আমি দুঃখিত!’ ওর চোখ ভরে উঠল জলে। কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল, ‘দুঃখিত, আমার কোনো বন্ধু নেই। আমি আপনাকে চিনি না।’ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।

 

হতে পারে সে বাজি ধরেছিল। আসলেই কি আমি গম্ভীর প্রকৃতির? আমি কি কারো বন্ধু হতে পারি না। তাছাড়া বন্ধুর সাথে অভিমান হতেই পারে। তাই বলে কি একটা সম্পর্ক অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে? তবে কি আমি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছি? কী এমন রহস্য লুকিয়েছিল ওই ফুলে? ফুল দিতে না পারুক, তাই বলে কি কাঁটা দিয়ে তার প্রতিদান দেবে? আর কত বড় হবে অনুতপ্তের পাহাড়? এর শেষ কোথায়?

 

এক বছর গত হতে চলল। আর কোনো কথা হয়নি সেই বালিকা বন্ধুর সাথে। হয়তো সে এখন বালিকা থেকে কিশোরী। একদিন কিশোরী থেকে যুবতী হবে। শেষে যুবতী থেকে বৃদ্ধা। তবুও তাকে বলবো, চাইছি তোমার বন্ধুতা…   সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com